যেসব কারণে গোসল ফরজ হয় - Plp Corner

যেসব কারণে গোসল ফরজ হয় - Plp Corner

গোসল ফরজ হয় যেসব কারণে

যৌন উত্তাপের শুরু দিকে যে পানি বের হয় এবং যা বের হওয়ার পর উত্তাপ কমে যায় না বরং বেড়ে যায় তাকে মজি বা কামরস বলা হয়। পরিতৃপ্ত হওয়ার পর উত্তাপ শেষে যে পানি বের হয় তাকে মনি (বীর্য) বলা হয়। উভয়ের মধ্যে পার্থক্য ও চেনার উপায় হলো, মনি বের হওয়ার পর তৃপ্তি আসে। উত্তাপ শেষ হয়ে যায়। আর কামরস বের হওয়ার পর উত্তাপ কমে না বরং বেড়ে যায়। মজি পাতলা হয়, মনি গাঢ় হয়।

মজি বের হলে গোসল ফরজ হয় না কিন্তু ওজু ভেঙ্গে যায়। বীর্য বের হলে গোসল ওয়াজিব হয়।

১. ঘুমে বা জাগ্রত অবস্থায় যৌনউত্তাপের সঙ্গে বীর্য বের হলে নারী-পুরুষ উভয়ের ওপর গোসল ওয়াজিব। চাই তা হস্তমৈথুনের মাধ্যমে হোক বা শুধু চিন্তা ও কল্পনার কারণে হোক। যেভাবেই বের হোক-সর্বাবস্থায় গোসল ওয়াজিব।

২. যখন পুরুষের যৌনাঙ্গের সুপারি [পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগ] ভেতরে প্রবেশ করে এবং অদৃশ্য হয়ে যায়, তখন মনি বের না হলেও গোসল ওয়াজিব। সুপারি নারীর যৌনাঙ্গে প্রবেশ করলেও গোসল ফরজ। আবার পায়ুপথে প্রবেশ করলেও গোসল করা ফরজ। তবে, পায়ুপথে মিলিত হওয়া অনেক বড়ো গোনাহের কাজ।

৩. নারীর সামনের রাস্তা দিয়ে প্রতিমাসে যে রক্ত বের হয় তাকে হায়েজ বলে। হায়েজ বন্ধ হলে তাদের উপর গোসল করা ওয়াজিব। সন্তান প্রসব করার পর যে স্রাব বের হয় তাকে নেফাস বলে। নেফাস বন্ধ হলেও গোসল করা ওয়াজিব। মূলকথা চার জিনিস দ্বারা গোসল ওয়াজিব হয়-

১. যৌনউত্তাপের সঙ্গে বীর্য বের হলে।

২. পুরুষের সুপারি ভেতরে চলে গেলে।

৩. হায়েজের রক্ত বন্ধ হলে।

৪. নেফাসের রক্ত বন্ধ হলে। [বেহেশতি জেওর: খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ৭৫]

চার কারণে গোসল ফরজ হয়

১. যৌনউত্তাপের সময় ক্ষিপ্রতার সঙ্গে শরীর থেকে বীর্য বের হওয়া। ঘুমে থাকুক বা জাগ্রত। হুঁশে থাকুক বা বেহুঁশ হোক। কোনো চিন্তা বা কল্পনা করে। বিশেষ অঙ্গ নাড়াচাড়া করে বা অন্যউপায়ে।

২. যৌনউত্তাপের সঙ্গে কোনো পুরুষের যৌনাঙ্গের মাথা কোনো জীবিত নারীর লজ্জাস্থানে প্রবেশ করা বা কোনো মানুষের পায়ুপথে প্রবেশ করা; সে পুরুষ হোক বা নারী অথবা হিজড়া হোক; বীর্য বের হোক বা না হোক- উভয়ে প্রাপ্তবয়স্ক হলে উভয়ের ওপর গোসল ফরজ। নয়তো শুধু প্রাপ্তবয়স্কব্যক্তির উপর।

৩. ঋতু থেকে পবিত্র হওয়ার পর।

৪. নেফাস থেকে পবিত্র হওয়ার পর। [বেহেশতি জেওর]

জরুরি মাসয়ালা

১. অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের সঙ্গে কেউ সহবাস করলে তার উপর গোসল করা ওয়াজিব নয়। কিন্তু অভ্যাস করার জন্য গোসল করবে। পুরুষের উপর গোসল করা ওয়াজিব।

২. যদি সামান্য পরিমাণ বীর্য বের হয়, এরপর গোসলের পর পুনরায় মনি বের হয়, তবে আবার গোসল করা ওয়াজিব।

৩. যদি গোসলের পর স্ত্রীর যৌনাঙ্গ দিয়ে স্বামীর বীর্য বের হয়, যা ভেতরে থেকে গিয়েছিলো তবে গোসল করতে হবে না। [বেহেশতি জেওর: খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ৭৫।

৪. প্রশ্ন: কেউ স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করলো। এরপর প্রস্রাব করে ভালোভাবে গোসল করে নেয়। এরপর যখন নামাজে দাঁড়ায় তখন আবার বীর্য বা কামরসের ফোটা আসে। এমন ব্যক্তির উপর কি গোসল করা ওয়াজিব? উত্তর: সে সময় যদি তার যৌনাঙ্গ উত্তপ্ত না হয়, তবে তার উপর গোসল করা ওয়াজিব নয়। কিন্তু যৌনাঙ্গ উত্তপ্ত হলে এবং তার মধ্যে উত্তাপ সৃষ্টি হলে গোসল করা ওয়াজিব। [ইমদাদুল ফতোয়া]

৫. যদি কারো যৌনাঙ্গ দিয়ে কিছু বীর্য বের হয় এবং সে গোসল করে নেয়। গোসলের পর তার যৌনাঙ্গ দিয়ে আবার কিছু বীর্য বের হয় তখন তার প্রথম গোসল বাতিল হয়ে যাবে এবং তার উপর দ্বিতীয়বার গোসল করা ফরজ। শর্ত হলো, অবশিষ্ট বীর্য ঘুমানো, পেশাব করা এবং চল্লিশ পা বা তার চেয়ে বেশি হাঁটার আগে বের হতে হবে। কিন্তু দ্বিতীয়বার বীর্য বের হওয়ার আগে সে যদি কোনো নামাজ আদায় করে থাকে, তবে তা শুদ্ধ হয়ে যাবে।

৬. পেশাবের পর বীর্য বের হলেও গোসল ফরজ হবে। যদি তা যৌনউত্তাপের সঙ্গে বের হয়। [বেহেশতি জেওর: খণ্ড: ১১, পৃষ্ঠা: ২৮৮]

যে অবস্থায় গোসল ফরজ নয়

১. বীর্য যদি যৌনউত্তাপের সঙ্গে বের না হয় তবে গোসল ফরজ নয়। যেমন, কোনো ব্যক্তি বোঝা উঠাচ্ছে বা ওপর থেকে পড়ে গেলো, কেউ তাকে আঘাত করলো বা ব্যথার কারণে তার বীর্য যৌনউত্তাপ ছাড়াই বের হয়ে গেলো, তবে তার ওপর গোসল ফরজ নয়।

২. যদি কোনো পুরুষ নিজের বিশেষ অঙ্গে কাপড় পেচিয়ে সহবাস করে, তবে তার উপর গোসল করা ওয়াজিব নয়। শর্ত হলো, কাপড় এতো মোটা হবে যে, শরীরের উত্তাপ ও সহবাসের মজা পাওয়া যায় না। সতর্কতা হলো, সুপারি প্রবেশের কারণে গোসল ওয়াজিব হবে।

৩. যদি কোনো পুরুষ সুপারির অংশের চেয়ে কম পরিমাণ প্রবেশ করায় তবে তার উপর গোসল ওয়াজিব হবে না।

৪. কামরস ও রোগজনিত পানি বের হওয়ার দ্বারা গোসল ফরজ হয় না।

৫. অনিয়মিত ঋতুর দ্বারা গোসল ফরজ হয় না।

৬. যেব্যক্তির সবসময় বীর্য বের হওয়ার রোগ আছে, বীর্য বের হওয়ার দ্বারা তার গোসল ওয়াজিব হবে না।

স্বপ্নদোষের মাসয়ালা

১. ঘুম থেকে উঠে চোখ খুলে যদি শরীরে বা কাপড়ে বীর্য লেগে থাকতে দেখে তবে গোসল করা ওয়াজিব। চাই ঘুমের মধ্যে কোনো স্বপ্ন দেখুক বা না দেখুক।

২. স্বপ্নে পুরুষের পাশে বা নারীর পাশে শুতে দেখে বা সহবাসের স্বপ্ন দেখে এবং আনন্দ পায় কিন্তু বীর্য বের হয় না, তবে গোসল করা ওয়াজিব নয়। আর বীর্য বের হলে গোসল ওয়াজিব হবে। যদি কাপড়ে আর্দ্রতা অনুভূত হয় কিন্তু মনে করতে পারে না বা বুঝতে পারে না এটা মনি [বীর্য] না মজি [বীর্য থেকে পাতলা শুক্ররস যা বীর্য বের হওয়ার আগে বের হয়), তখনও গোসল করা ওয়াজিব।

৩. স্বামী-স্ত্রী দু'জন এক খাটে শুয়ে আছে। ঘুম ভেঙ্গে বিছানার চাদরে বীর্যের দাগ দেখে কিন্তু স্বামী-স্ত্রী কেউ স্বপ্ন দেখার কথা মনে করতে পারে না, তখন উভয়ে গোসল করে নেবে। কেননা জানা নেই কার বীর্য।

৪. অসুস্থতা ও অন্যকোনো কারণে কোনোপ্রকার কামভাব ও উত্তেজনা ছাড়া নিজে নিজে বীর্য বের হয়ে আসলে গোসল ওয়াজিব নয়। তবে ওজু ভেঙ্গে যাবে। [বেহেশতি জেওর: খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ৭৬।

যাদের ওপর গোসল ওয়াজিব তাদের জন্য কিছু বিধান

১. যার ওপর গোসল করা ওয়াজিব তার জন্য কোরআনশরিফ ছোঁয়া, তেলওয়াত করা, মসজিদে যাওয়া নাজায়েজ। 

২. আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা, কালেমা পড়া, দরুদশরিফ পড়া জায়েজ।

৩. তাফসিরের গ্রন্থাদি ওজু ও গোসল ছাড়া ছোঁয়া মাকরুহ। অনুবাদসহ কোরআনশরিফ ছোঁয়া সম্পূর্ণ হারাম। বেহেশতি জেওর: খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ৭৬] 

৪. যে নারী হায়েজ ও নেফাস অবস্থায় থাকে অথবা তার ওপরে গোসল করা ফরজ- তার জন্য মসজিদের যাওয়া, কাবাশরিফ তওয়াফ করা, কোরআনশরিফ তেলাওয়াত করা এবং ছোঁয়া অবৈধ।

৫. যদি কোরআনশরিফ গেলাফ বা রুমাল জড়ানো থাকে তবে কোরআনশরিফ ছোঁয়া ও উঠানো জায়েজ।

৬. জামার হাতা দিয়ে এবং পরিহিত উড়নার আঁচল দিয়ে কোরআনশরিফ ধরা ও উঠানো বৈধ নয়, তবে শরীর থেকে পৃথক কোনো কাপড় হলে যেমন, রুমাল ইত্যাদি দিয়ে উঠানো জায়েজ।

৭. যদি পুরো সুরা ফাতেহা দোয়ার নিয়তে পড়ে এবং এমন অন্যান্য দোয়া যা কোরআনশরিফে এসেছে তা দোয়ার নিয়তে পড়ে, তেলওয়াতের নিয়তে না পড়ে তবে জায়েজ। তাতে কোনো গোনাহ হবে না। দোয়ায়ে কুনুত পড়াও জায়েজ।

৮. কালেমা ও দরুদশরিফ পড়া, আল্লাহর নাম নেয়া অথবা অন্যকোনো ওজিফা পড়া জায়েজ।

৯. যদি কোনো নারী মেয়েদের কোরআনশরিফ পড়ায়, এমন অবস্থায় তার জন্য থেমে থেমে পড়া জায়েজ। সে নাজেরা (দেখে) পড়ানোর সময় এক আয়াত পুরো পড়বে না, বরং এক দুই শব্দর পর শ্বাস ছেড়ে দেবে। থেমে থেমে আয়াত বলে দেবে।

১০. হায়েজের সময় মোস্তাহাব হলো, নামাজের সময় হলে ওজু করে কোনো পবিত্র স্থানে কিছুক্ষণ বসে বসে আল্লাহর জিকির করবে। যাতে নামাজের অভ্যাস ছুটে না যায়। [বেহেশতি জেওর: খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ৬৩]

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পিএলপি কর্নার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url